ভোলার মেয়ে ইস্পিতার মৃত্যুর রহস্য ঘিরে ধোঁয়াশা

শরীফ হোসাইন প্রকাশিত: ২৪ জুন , ২০২৫ ১৫:০৭ আপডেট: ২৪ জুন , ২০২৫ ১৫:০৭ পিএম
ভোলার মেয়ে ইস্পিতার মৃত্যুর রহস্য ঘিরে ধোঁয়াশা

ভোলা থেকে ঢাকাগামী এমভি কর্ণফুলী-৪ লঞ্চ থেকে নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার চার দিন পর ভোলার কলেজছাত্রী সুকণ্যা আক্তার ইস্পিতার (২১) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি ভোলা সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের নবীপুর গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ রানার মেয়ে।
নৌ-পুলিশ জানায়, গত ২০ জুন শুক্রবার দিবাগত রাতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রমনী মোহন ইউনিয়নের বুড়িরঘাট এলাকার মেঘনা নদীর তীরে একটি অজ্ঞাত তরুণীর মরদেহ ভেসে আসে। উদ্ধার করা মরদেহের নাম-পরিচয় না পাওয়ায় তা ময়নাতদন্ত শেষে আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের কাছে দাফনের জন্য হস্তান্তর করা হয়। ২২ জুন বিকেলে ইস্পিতার বাবা মাসুদ রানা মেয়ের ছবি ও জামাকাপড় দেখে মরদেহ শনাক্ত করেন।
এর আগে, গত ১৭ জুন সকালে ভোলা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া কর্ণফুলী-৪ লঞ্চ থেকে মাঝনদীতে ঝাঁপ দেন ইস্পিতা। ঘটনার পরপরই বিষয়টি নিয়ে লঞ্চযাত্রী ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ দাবি করেন, লঞ্চে কেবিনে ধর্ষণের শিকার হয়েই তিনি নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন। যদিও এ ব্যাপারে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ইস্পিতার বাবা জানান, তার মেয়ে বাড়ি থেকে টিউশনি করতে যাওয়ার কথা বলে বের হয়। এরপর লঞ্চে এক তরুণীর নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার খবর পেয়ে তিনি কর্ণফুলী লঞ্চের ভোলা অফিসে যান। সেখানে ছবির মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়, ঝাঁপ দেওয়া তরুণীই তার মেয়ে। তিনি বলেন, মেয়েটি একটি বুকিং দেওয়া কেবিনে উঠেছিল। ভাড়া চাইলে সে জানায়, বুকিং দেওয়া ব্যক্তি পরিশোধ করবে। এরপর মোবাইল ফোনে কারও সঙ্গে উত্তেজিতভাবে কথা বলার পরই সে নদীতে ঝাঁপ দেয়।
মাসুদ রানা অভিযোগ করেন, আমার মেয়ে কেন ঢাকাগামী লঞ্চে উঠল, তা তদন্তে বের করা দরকার। প্রশাসন মোবাইল ট্র্যাকিং ও কললিস্ট বিশ্লেষণ করলেই বিস্তারিত জানা যাবে। কেউ তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে থাকলে, বা হত্যা করে থাকলে তার বিচার চাই।
কর্ণফুলী-৪ লঞ্চের সুপারভাইজার নান্টু বাবু জানান, ইলিশা ঘাট ছাড়ার পর কালিগঞ্জ অতিক্রম করে কিছু দূর গেলে খবর আসে এক তরুণী তৃতীয় তলা থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন। লঞ্চ ফিরে গিয়ে উদ্ধারচেষ্টা চালায়। একবার তরুণীকে নদীতে ভাসতে দেখা গেলেও কাছে যাওয়ার আগেই সে চোখের আড়াল হয়ে যায়। কোস্টগার্ডকে জানিয়ে লঞ্চ আবার ঢাকার পথে রওনা দেয়।
ব্রাদার্স নেভিগেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপক আলাউদ্দিন জানান, ঘটনার পর লঞ্চে থাকা অন্য এক নারী ৯৯৯-এ ফোন করে জানান, ওই তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পরে মুন্সিগঞ্জে লঞ্চটি পৌঁছালে পুলিশ দুইজন স্টাফ ও অভিযোগকারী নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়। প্রাথমিকভাবে তাদের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
লক্ষ্মীপুর মজুচৌধুরী ঘাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. আজিজুল হক জানান, উদ্ধারের সময় মরদেহে কালচে দাগ ছিল। নিহতের বাবা বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মোন্নাফ বলেন, নৌ-পুলিশের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo