বিলুপ্তির পথে শখের রেশমি চুড়ি

মো: আমিনুল হক প্রকাশিত: ২৩ আগস্ট , ২০২৫ ১৬:৪৮ আপডেট: ২৩ আগস্ট , ২০২৫ ১৬:৪৮ পিএম
বিলুপ্তির পথে শখের রেশমি চুড়ি

রেশমি চুড়ি, যা একসময় বাঙালি নারীর সাজের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, তা আজ ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে। এটি কেবল একটি গহনা নয়, বরং বাঙালি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, আবেগ এবং নারীর জীবনের বিভিন্ন অধ্যায়ের এক নীরব সাক্ষী। এর বিলুপ্তি কেবল একটি অলংকারের হারিয়ে যাওয়া নয়, বরং এটি একটি গভীর সাংস্কৃতিক সংকটকে নির্দেশ করে, যা আধুনিকতার দ্রুত প্রবাহে আমাদের ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ এবং স্মৃতির বিলোপকে তুলে ধরে। ঐতিহ্যের এক ঝলক। রেশমি চুড়ি বাঙালি নারীর জীবনে বিভিন্ন ভাবে জড়িয়ে আছে। এটি শুধু হাতের শোভা বর্ধন করত না, বরং এর সঙ্গে মিশে ছিল অসংখ্য গল্প, স্মৃতি আর অনুভূতি।শুভ্রতা ও পবিত্রতা ।নববধূর হাতে রেশমি চুড়ি ছিল শুভ্রতা ও পবিত্রতার প্রতীক। এটি ছিল নতুন জীবনের সূচনা, নতুন সম্পর্কের বন্ধন এবং ভবিষ্যতের স্বপ্ন বোনার এক নিদর্শন।উৎসব ও পার্বণ: দুর্গাপূজা, পহেলা বৈশাখ, ঈদ যেকোনো উৎসবে বাঙালি নারীর হাতে শোভা পেত রেশমি চুড়ি। বিভিন্ন রঙের রেশমি চুড়ি উৎসবের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তুলত। এর রিনিঝিনি শব্দ যেন উৎসবের এক নিজস্ব সুর সৃষ্টি করত। দৈনন্দিন জীবন ও সখ্যতা: শুধু বিশেষ দিনেই নয়, দৈনন্দিন জীবনেও রেশমি চুড়ি ছিল বাঙালি নারীর নিত্যসঙ্গী। দুই হাতে রেশমি চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ যেন তাদের প্রতিটি কাজ, প্রতিটি চলাফেরার সঙ্গে একাত্ম হয়ে থাকত। এটি ছিল তাদের সখ্যতা, আনন্দ, দুঃখ, ভালোবাসার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। মা-দাদীমাদের কাছ থেকে  রেশমি চুড়ি উপহার পেত, যা ছিল প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের ভালোবাসার এক নিবিড় বন্ধন। আবেগ ও অনুভূতি: রেশমি চুড়ির সঙ্গে জড়িয়ে ছিল নারীর একান্ত আবেগ ও অনুভূতি। ভালোবাসার মানুষের দেওয়া এক সেট রেশমি চুড়ি হয়তো সারাজীবন যত্ন করে রাখত অনেকেই। এটি ছিল প্রেম, বিরহ, আনন্দ, বেদনার এক নীরব ভাষা। উর্মি, স্মৃতি, আলেফা ও মোর্শেদা বলেন আমাদের ভালোবাসার মানুষ এই রেশমি উপহার দিয়েছিল যাহা এখনো স্বযতনে রেখেছি যুগ যুগ ধরে মনের মাধুরী মেখে।রেশমি চুড়ির উৎপাদন কমে যাওয়ায় এর কারিগরদের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক কারিগর এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। ফলস্বরূপ, রেশমি চুড়ি তৈরির দক্ষতা এবং ঐতিহ্য উভয়ই বিলুপ্ত হচ্ছে। বাজারেও রেশমি চুড়ির দোকান কমে আসছে ।নতুন প্রজন্মের নারীরা ঐতিহ্যবাহী অলংকারের চেয়ে আধুনিক ও ট্রেন্ডি গহনার প্রতি বেশি আগ্রহী। রেশমি চুড়ির সঙ্গে তাদের আবেগিক সংযোগের অভাব রয়েছে, যা এর বিলুপ্তিতে বড় ভূমিকা রাখছে। এটি কেবল একটি অলংকার নয়, এটি আমাদের আবেগ, স্মৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখা আমাদেরই দায়িত্ব।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo