"কুরবানী হোক আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে, লোক দেখানো কুরবানী নয়"

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ৫ জুন , ২০২৫ ১৫:৩৯ আপডেট: ৫ জুন , ২০২৫ ১৫:৩৯ পিএম
"কুরবানী হোক আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে, লোক দেখানো কুরবানী নয়"

মুসলমানদের প্রধান দুটি উৎসব ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা। একমাস রমজানের সিয়াম সাধনার পর শাওয়াল মাসের প্রথম দিন ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয় আর জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উদযাপন করা হয়। মহান আল্লাহর স্বপ্নযোগে নির্দেশে নবী ইব্রাহীম (আ.) তাঁর অতি আদরের পুত্র নবী ইসমাঈলকে (আ.) কে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে কোরবানি করার জন্যে সার্বিকভাবে প্রস্ততি নেন। মহান আল্লাহ খুশি হয়ে তাঁর এই কোরবানি কবুল করেন। পরবর্তীতে ঘটনাক্রমে আল্লাহর তরফ থেকে ইসমাঈলের (আ.) পরিবর্তে জান্নাতের পশু (দুম্বা) কোরবানির মাধ্যমে সেই ত্যাগের ঘটনার সমাপ্তি ঘটেছিল। অন্য দিকে দ্বার উম্মোচিত হয়েছিল নতুন এক অধ্যায়ের। আর তার নাম‌ই দেওয়া হয়েছে কোরবানি। পরবর্তীতে যুগ যুগ ধরে এই কুরবানী প্রথার প্রচলন অব্যাহত রয়েছে এবং এটি কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। হযরত ইসমাঈল (আ.) ছিলেন হযরত ইব্রাহীম (আ.) কাছে অতি প্রিয়, তাই আল্লাহ তাঁকে পরীক্ষার জন্য তাঁর প্রিয় সন্তানকে কুরবানী দিতে বলেন। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ‘তোমরা যা ভালোবাসো তা থেকে ব্যয় (দান) না করলে কখনো পুণ্য লাভ করবে না।’ (সূরা আল-ইমরান, আয়াত : ৯২)। কুরবানী দেওয়া নিঃসন্দেহে একটি মহৎ দান। কোরবানির অপর নাম হচ্ছে ত্যাগ। প্রিয় বস্তুকে ত্যাগ করার মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর দরবারে পুণ্য লাভ করে থাকি। কোরবানি চতুষ্পদ জন্তু দিয়ে করতে হয়। একটি ছাগল দিয়ে সর্বোচ্চ এক নামে, তেমনি একটি ভেড়া বা দুম্বা দিয়েও এক নামে কোরবানি করা যায়। অন্যদিকে একটি গরু বা মহিষ বা উট দিয়ে, এক থেকে সর্বোচ্চ সাত নামের কোরবানি দেওয়া যায়। ইবাদতের মধ্যে আর্থিক ইবাদত হচ্ছে কোরবানি। এই কোরবানি যদিও পশু দিয়ে দেওয়া হয় মূলত মনের পশুত্বকে কোরবানি করাটাই হচ্ছে মূল উদ্দেশ্য। আর এই কোরবানি হতে হবে একমাত্র সেই মহান রাব্বুল আ’লামীনের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য, তারই নামে এবং তার দেখানো পদ্ধতিতেই। যা আমরা হযরত মুহাম্মদ (সা:) শেখানো পন্থায় করে থাকি। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না তার (কোরবানির) গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাক্বওয়া।’ (সূরা আল-হজ্ব, আয়াত : ৩৭)। এখানে সরাসরি তাক্বওয়া বা খোদাভীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ কোরবানির গোশত, রক্ত ইত্যাদি আল্লাহর উদ্দেশ্য নয়। তিনি চান আমাদের অন্তরের ভয় বা পরহেজগারী। আমাদের বাংলাদেশ তথা বিশ্বের নানা দেশে এই কোরবানি নিয়ে মনে হয় যেন নানা ধরনের উপহাস হচ্ছে! কোরবানির পশু কেনা থেকে শুরু করে নানা ক্ষেত্রে তা আমরা উপলব্ধি করি। আমরা অনেক ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য না করে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’র জন্য কোরবানি করি। আমরা গরু বা উট কিনি, যাতে হাঁকানো দামের কারণে পরদিন আমাদের ছবি ও গরুর ছবি আসে খবরের শিরোনাম হয়ে। এ ক্ষেত্রে আমরা ব্যবহার করি হারাম উপায়ে অর্জিত অর্থ, আমরা লোক দেখানোর জন্য পশু নির্বাচন করি, কোরবানি করি, সুদ ও হারাম উপার্জনের ব্যক্তিদের সাথে শরীক সহ আরো কত কি? অথচ লোক দেখানো কুরবানী বা ‘রিয়া’ হচ্ছে কবিরা গুনাহ। এতে যে কাজটি করা হয় তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য না করে লোক দেখানোর জন্য করা হয়। অপরদিকে এই রিয়া বা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কিছু করা আল্লাহর অপছন্দনী। আবার কখনো কখনো দেখা যায় কোরবানি এলেই রেফ্রিজারেটর, ডিপ-ফ্রিজার কেনার ধুম পড়ে যায়। মনে হয় মজুদ করে রাখার জন্য কিংবা গোশত খাওয়ার জন্যই বুঝি কোরবানি। কিন্তু না, এটা ঠিক নয়। রিয়া অনেক রকম। তার মধ্যে প্রধানতম হচ্ছে শিরকের পর্যায়ের। কারণ যে আল্লাহর সন্তুষ্টি চায়, সে যেন সেই উদ্দেশেই সৎ কাজ করে আর কোনক্রমেই যেনো আল্লাহর ইবাদতে কাউকে শরীক না করে। এর অর্থ হচ্ছে কোরবানি হওয়া উচিৎ ছিল আল্লাহর জন্য, কিন্তু আমরা দুনিয়ার যশ বা খ্যাতির জন্য কোরবানি করছি। মিডিয়ায় আমাদের নাম প্রচারের জন্য দামী গরু বা উট ক্রয় করছি। তাহলে যার সন্তুষ্টির জন্য কাজটি করা উচিৎ ছিল তা না করে সেখানে অন্যদেরকে শরীক করছি। আল্লাহ এই শিরক সহ্য করেন না। অতএব আমরাদের লোকদেখানো কুরবানী দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সেই সাথে খেয়াল রাখতে হবে যাদের সাথে আমরা কুরবানী দিচ্ছি সে কোন পন্থায় উপার্জন করছে, সেই ব্যক্তি সুদ-ঘুষের সাথে সম্পৃক্ত আছে কিনা এবং সেই ব্যক্তি নামাজি কিনা এই সবগুলো বিষয় মাথায় রেখেই আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আমাদের কুরবানী দেওয়া জরুরি।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo