নওগাঁর বদলগাছী মহিলা ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষের পদ নিয়ে চলছে চরম বিশৃঙ্খলা। কলেজটির দুই শিক্ষক—মাহবুব আলম ও ইমামুল হোসেন—একই সময় নিজেদের ‘বৈধ’ অধ্যক্ষ দাবি করায় প্রশাসনিক জটিলতা এবং শিক্ষার পরিবেশ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
রোববার ৫/৭/২০২৫ ইং তারিখে নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. ইমামুল হোসেন অভিযোগ করেন, তিনি কলেজ পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পেলেও বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ মাহবুব আলম তা মেনে নিচ্ছেন না এবং তাঁকে দফায় দফায় বাধা ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করছেন।
ইমামুল হোসেন জানান, মাহবুব আলমকে অভিজ্ঞতা সনদ জালিয়াতি ও জ্যেষ্ঠতার বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২৪ সালের ৩ জুলাই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) বেতন বন্ধসহ সাময়িক বরখাস্ত করে। এর আগেই ২০২২ সালে তাকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, যা নিয়ে বির্তক রয়েছে। পরবর্তীতে পরিচালনা কমিটি তাকে বরখাস্ত করে কলেজের আরেক সহকারী অধ্যাপক মমতাজ জাহানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়।
কিন্তু ২০২৪ সালের মে মাসে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদে বদল হয়। নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল। তিনিই পুনরায় মাহবুব আলমকে অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করেন এবং মমতাজ জাহানের দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করেন বলে অভিযোগ উঠে।
এ নিয়ে আইনি লড়াই শুরু হলে হাইকোর্ট ২ জুন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজ্ঞাপন তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন এবং পুরোনো সভাপতি লুৎফর রহমান পুনরায় স্বপদে ফিরে আসেন। ৭ জুন মমতাজ জাহান মারা গেলে ২৫ জুন লুৎফর রহমান পরিচালনা কমিটির পক্ষে ইমামুল হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন।ইমামুল হোসেন আরও অভিযোগ করেন, ২৯ জুন তিনি অধ্যক্ষের কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করতে গেলে মাহবুব আলম ও তাঁর অনুসারীরা তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন এবং কলেজের বিভিন্ন কাগজপত্র ও নগদ অর্থ লুট করেন। থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকৃতি জানায় বলেও তিনি অভিযোগ করেন।অপরদিকে, মাহবুব আলম তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে জানান, তিনি কলেজের বৈধ অধ্যক্ষ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ীই তাঁকে পুনর্বহাল করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমাকে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা হয়, যা অবৈধ। হাইকোর্টে রিট চলমান থাকা অবস্থায় পুরোনো কমিটি কিভাবে নতুন করে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়—তা আইনসঙ্গত নয়।”
তিনি আরও বলেন, “ইমামুল হোসেনের বিরুদ্ধে আনীত শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।”
এ অবস্থায় বদলগাছী মহিলা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা এবং সাধারণ মানুষ কলেজের প্রশাসনিক অচলাবস্থায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। সংশ্লিষ্ট মহলের হস্তক্ষেপ ছাড়া এ সংকট থেকে উত্তরণ অসম্ভব বলে মনে করছেন অনেকেই।