পদ্মাসেতুর রেললাইনে দেড় বছরে দুর্ঘটনায় মৃত্যু ২ ডজন, স্থানীয়দের উদ্বেগ

মাসুদ রেজা ফিরোজী প্রকাশিত: ১০ জুলাই , ২০২৫ ১৬:২৫ আপডেট: ১০ জুলাই , ২০২৫ ১৬:২৫ পিএম
পদ্মাসেতুর রেললাইনে দেড় বছরে দুর্ঘটনায় মৃত্যু ২ ডজন, স্থানীয়দের উদ্বেগ

মাদারীপুর জেলার শিবচরে রেল লাইন চালু হওয়ার পর থেকে দেড় বছরে রেলে কাটা পড়ে কমপক্ষে ২ ডজন মৃত্যু হয়েছে। এসবের মধ্যে কেউ ঘুরতে এসে, কেউ রেল লাইন পার হতে গিয়ে আবার কেউ পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে গিয়ে মারা গেছে। এছাড়াও দুর্ঘটনার পর রেলে কাটা পড়া অনেকের মরদেহও উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু। কীভাবে এরা রেলে কাটা পড়লো, তার সঠিক কারণ জানা যায়নি।

তবে স্থানীয়রা মনে করছেন, দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিন বিকেলে শিবচরের পাঁচ্চর এলাকার রেললাইনে ঘুরতে আসা মানুষের আড্ডা বসে। বিকেল থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত এই ভিড় থাকে। মূলত, ঘুরতে এসেও রেলে কাটা পড়ে মারা যায় অনেকেই। তবে অনেকেরই ধারণা, রেললাইনে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাও ঘটে থাকতে পারে!

জানা যায়, ঢাকার কমলাপুর থেকে রাজশাহী, খুলনা পর্যন্ত এই রুটে ট্রেন চলাচল করে। প্রতিদিন সকাল, দুপুর, বিকেল এবং রাতে ট্রেন গুলো যাওয়া-আসা করে।

এই এলাকায় প্রথমবারের মতো রেললাইন নির্মাণের সময় থেকে সাধারণ মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এই রেল সড়ক পথ। বাড়ির আশেপাশে হওয়ার কারণে প্রতিদিন বিকেলে স্থানীয়রা ঘুরতে বের হয় রেল লাইনে। সন্ধ্যার পর থেকে ভিড় যেন আরও বাড়তে থাকে। রেল চালুর পরও এই ধারা অব্যাহত থেকে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত শিবচরের রেললাইনের পাঁচ্চর সংলগ্ন স্থানে রেলে কাটা পড়ে মারা গেছে এ পর্যন্ত ৯ জন। ভাঙ্গা এলাকায় ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। চলতি বছরের ছয় মাসে কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। এছাড়া গত ২০২৩ সালের অক্টোবর হতে রেলে কাটা পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা কমপক্ষের দুই ডজনের। এদের মধ্যে ঘুরতে এসে ছবি তুলতে গিয়েই মারা গেছে দশ জনের মতো। তারা সকাল এবং বিকেলের দুর্ঘটনায় মারা গেছে। অন্যদের মরদেহ গুলো রেল লাইন থেকে রাতে এবং ভোরে উদ্ধার করা হয়েছে।

পাঁচ্চর এলাকার রেল সড়কে ঘুরতে আসা স্থানীয় শিক্ষক মো. জলিল বলেন, বিকেল হলেই রেল লাইনে মানুষের আড্ডা জমে উঠে। এছাড়া সকাল-দুপুরেও রেললাইন ধরে যুবক-যুবতীদের মাঝে মধ্যে হাঁটতে দেখা যায়। আসলে স্থানীয় ছাড়া অনেকেই ট্রেন চলাচলের সময় জানে না। দূর থেকে ট্রেন দেখে সরতে গিয়েও দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। দেখলে মনে হয় ট্রেন ধীরে আসছে, কিন্তু উলটো। প্রচণ্ড গতিতে ট্রেন চলে এখানে। তাই রেললাইনে যত্রতত্র ঘুরাঘুরি করা ঠিক না।

শিবচর রেললাইনে দায়িত্বরত রেল পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. সাফুর আহমেদ বলেন, আমরা দুর্ঘটনার পরই ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করি। বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে এখানে। সাধারণ মানুষের অবাধে রেললাইনে বিচরণ করা বন্ধ করতে হবে। এই এলাকার রেল লাইনে মানুষের ঘুরাঘুরি বেশি। স্থানীয়দের আরও সচেতন হতে হবে।

শিবচর স্টেশনের মাস্টার মো. সেলিম হোসেন বলেন, এই লাইনটি খুবই গতিশীল। এখানে ১ শত কিলোমিটারেরও বেশি গতিতে রেল চলাচল করে। দুর্ঘটনা এড়াতে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত রেললাইনে হাঁটাহাঁটি বন্ধ করতে হবে। মানুষকে সচেতন হতে হবে। রেল লাইন ঘুরার জায়গা না।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo