সুনামগঞ্জে স্টোরে নষ্ট আড়াই কোটি টাকার ওষুধ

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ২ সেপ্টেম্বর , ২০২৫ ১৮:০৯ আপডেট: ২ সেপ্টেম্বর , ২০২৫ ১৮:০৯ পিএম
সুনামগঞ্জে স্টোরে নষ্ট আড়াই কোটি টাকার ওষুধ
সুনামগঞ্জে স্টোরে নষ্ট আড়াই কোটি টাকার ওষুধ! ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে প্রায় আড়াই কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। গেল দুইদিন ধরে এই অস্বাভাবিক তথ্য প্রচার হয়। এই ঘটনায় বুধবার বিকালে ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কীভাবে এই ওষুধ গোডাউনে গেছে, এই তথ্যের কোন ডকুমেন্ট দেখাতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের সরকারি বিনামূল্যের ওষুধ না দিয়ে বাইরে ওষুধ পাচার হয় এমন তথ্য সম্প্রতি দুদকের অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে। যা দুদক কর্মকর্তারা গণমাধ্যম কর্মীদের সম্প্রতি (গত ২৬ মে) জানিয়েছিলেন।
সেবা নিতে আসা রোগীদের না দেওয়ায় ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে দাবি সেবা গ্রহিতাদের। এতে কেবল সরকারি অর্থের অপচয় হয়েছে। এছাড়াও স্টোর কিপারের পদে একজন থাকলেও স্টোরের দায়িত্ব পালন করছেন মেডিকেল টেকনেশিয়ান, সিনিয়ার স্টাফ নার্স পদের সাত জন।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের প্রতিদিন সেবা নিতে আসেন হাজারো মানুষ। হাসপাতালে ভর্তি থাকা তিনশ রোগী সেবা নেন প্রতিদিন। সেবা নিতে আসা এসব রোগীদের বেশির ভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে, অথচ হাসপাতালেই প্রতিবছর কোটি টাকার ওষুধ কেনা হয়।
রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ না দেওয়ার কারণে প্রায় ২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকার মূল্যের ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। কেনো এই জীবন রক্ষাকারী ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে এবং পরবর্তী করণীয় জানতে বুধবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১০ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করে দিয়েছেন। এই কমিটির প্রধান হয়েছেন হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আশুতোষ সিংহ। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের কথা বলা হয়েছে।
এবিষয়ে হাসপাতালে গিয়ে ছবি ও তথ্য নিতে চাইলে নানা অজুহাত দেখিয়ে বিদায় করার চেষ্টা করা হয় এই প্রতিবেদকসহ দুইজন সাংবাদিককে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রফিকুল ইসলাম নিজেও এমন চেষ্টা করেন। ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. সুমন বণিকের অনুমতি ছাড়া কোনো ছবি নেওয়ার অনুমতি দেওয়া যাবে না বলে জানান তিনি। তবে তিনি স্বীকার করেছেন হাসপাতালের স্টোর রুমে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রয়েছে।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. সুমন বণিক অফিসের কাজে ঢাকা থাকায় দায়িত্বে থাকা সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. বিষ্ণু প্রসাদ চন্দের কাছে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের ছবি ও তথ্য চাইলে, তিনিও অপারগতা জানালেন। এক পর্যায়ে এই প্রতিবেদকে বলেন, তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। এ নিয়ে অভ্যন্তরীণ সভা হয়েছে। সকল তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে জানালে, তিনি স্টোর রুম খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে সহযোগিতা করেন।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রফিকুল ইসলামের অফিসের পাশেই স্টোর রুমে পাওয়া যায় কার্টনে কার্টন মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। এসব কার্টন ভর্তি ওষুধের কোনোটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ৬ মাস আগে। আবার কোনোটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে। এসব ওষুধের ছবি তোলার সময় হঠাৎ স্টোর রুমে এসে হাজির হন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রফিকুল ইসলাম। দায়িত্বে থাকা স্টোর কিপার রাজন দে’র কাছে জানতে চান, কার অনুমতি নিয়ে স্টোর রুমের তালা খোলা হয়েছে। স্টোর কিপার রাজন দে’র উত্তরে ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. বিষ্ণু প্রসাদ চন্দের কথা শুনে চলে যান আবাসিক মেডিকেল অফিসার।
এরপর হাসপাতালের পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে মিললো এরচেয়ে দ্বিগুণ মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। এসব ওষুধের মেয়াদও এক বছর আগে থেকে দুইদিন আগেও কোন কোনটির মেয়াদ শেষ হয়েছে।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo