মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর চিকিৎসা সরঞ্জাম বিকল, সেবা প্রদান ব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ১৭ জুন , ২০২৫ ১৫:১৭ আপডেট: ১৭ জুন , ২০২৫ ১৫:১৭ পিএম
মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর চিকিৎসা সরঞ্জাম বিকল, সেবা প্রদান ব্যাহত
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগ নির্ণয়ের গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম বিকল ও জনবল সংকট স্বাস্থ্যসেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে

রোগ নির্ণয়ের গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন গত ছয় মাস ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। এতে গর্ভবতী নারীসহ অন্য রোগীদের বাইরে থেকে চড়া দামে এ পরীক্ষা করতে হচ্ছে।সময়মতো এক্সরে ফিল্মের সরবরাহ থাকে না। ফলে আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন বিকল ও সময়মতো এক্সরে ফিল্মের সরবরাহ না থাকায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ৫০ শয্যার এ হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা।
উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন, দুটি পৌরসভাসহ পার্শ্ববর্তী ইসলামপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪শ রোগী সেবা নিতে আসেন এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এতে অধিকসংখ্যক রোগীর বিপরীতে মোট ১০টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র চারজন।দীর্ঘদিন ধরে মেডিসিন, চর্ম ও চক্ষু কনসালটেন্ট পদশূন্য থাকায় সাধারণ রোগীরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নেই কোনো রেডিওলজিস্ট ও কার্ডিওগ্রাফার, যা জরুরি স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে বড় বাঁধা। এমনকি একজন চিকিৎসা সহকারী ও (কম্পাউন্ডার) নেই এ হাসপাতালে। ফলে রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, রোগ নির্ণয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি সরঞ্জাম আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন গত ছয় মাস ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। অপারেশন থিয়েটার থাকলেও প্রয়োজনীয় ডাক্তার, ওটি বয়ের অভাবে সেটি কার্যত অচল। জরুরি প্রয়োজনে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য জেনারেটর থাকলেও তেলের বরাদ্দ না থাকায় সেটিও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে, সময় মতো এক্সরে ফিল্মের সরবরাহ না থাকায় প্রায় সময়ই বন্ধ থাকে এক্সরে মেশিন, যা রোগীদের দুর্ভোগ আরো বাড়াচ্ছে।হাসপাতালে আসা সাজেদা বেগম নামে এক গর্ভবতী নারী জানান, হাসপাতালের আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি নষ্ট। তাই বাইরে থেকে আলট্রাসনোগ্রাম করে নিয়ে আসলাম। এতে করে বাড়তি টাকা লাগল। যদি হাসপাতাল আলট্রাসনোগ্রাম করতে পারতাম তাহলে টাকা কম লাগত। দ্রুত মেশিন মেরামত করার দাবি জানান তিনি ।  অন্য রোগীদের বাইরে থেকে চড়া দামে এ পরীক্ষা করাতে হচ্ছে।  
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরুষ ওয়ার্ডের এক রোগী জানান, বিদ্যুৎ চলে গেলে অসহ্য গরমে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ি। তা ছাড়া রাতের বেলা অন্ধকারে ওষুধ ও খাবার খেতেও সমস্যা হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রেও বেহাল দশা।পাঁচজন পরিচ্ছন্নকর্মীর পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র দুজন। ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রশাসনিক কাজেও রয়েছে জনবলের অভাব। চারজন অফিস সহকারীর পদের বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র একজন। নিরাপত্তা রক্ষাব্যবস্থারও করুণ চিত্র। পুরো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাত্র একজন নিরাপত্তাকর্মী থাকলেও নেই কোনো সিসি ক্যামেরা।
এ ছাড়াও লোকবলের অভাবে হাসপাতালের প্রশাসনিক দুর্বলতাও চোখে পড়ার মতো। প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে চরমে। এতে দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা সঠিক সেবার পরিবর্তে বেশিরভাগ সময় বাড়তি টাকা খরচ ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এতে ভর্তি হওয়া রোগীদের সেবাদান ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে রোগীসহ কর্তব্যরত ডাক্তার-নার্সরা নিরাপত্তাহীনতা ভোগেন।
ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার সাইফুন্নাহার সানি জানান, দীর্ঘদিন যাবত আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন বিকল। চাহিদার তুলনায় এক্সরে ফিল্ম সরবরাহ থাকে কম। এজন্য রোগীদের ভোগান্তি ও খরচ উভয়ই বাড়ে। তিনি জানান, বিদ্যুতের বিকল্প জেনারেটরের ব্যবস্থা থাকলেও তেল সরবরাহের বরাদ্দ না থাকায় অকেজো হয়ে পড়ে আছে।এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গাজী মোহাম্মদ রফিকুল হক জানান, আমাদের জনবল সংকট, যন্ত্র বিকল এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতায় স্বাস্থ্যসেবায় বড় বাধা সৃষ্টি করছে। সেবার মান উন্নত করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে
 জেলা সিভিল সার্জন ডা আজিজুল হক এ বিষয়ে  জানান বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আশা করা যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে সহসাই ফিটবেক পাবো।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo