দুবাই থেকে গ্রেপ্তার শিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হত্যার প্রধান আসামি মহসীন মিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ২৪ জুলাই , ২০২৫ ১৮:৩৪ আপডেট: ২৪ জুলাই , ২০২৫ ১৮:৩৪ পিএম
দুবাই থেকে গ্রেপ্তার শিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হত্যার প্রধান আসামি মহসীন মিয়া

ইন্টারপোল রেড নোটিশে ধরা পড়ার পর দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন হত্যাকারী মহসীন
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. হারুনুর রশিদ খান হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি মহসীন মিয়াকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে গ্রেফতার করে দেশে ফিরিয়ে এনেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (পিবিআই)।২০২৫ সালের ২১ মে দুবাই পুলিশ ইন্টারপোলের রেড নোটিশের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করে। এরপর বাংলাদেশ পুলিশের একটি প্রতিনিধি দল তাকে দেশে ফিরিয়ে আনলে, ২০ জুলাই দুপুরে নরসিংদী জেলা পিবিআই কার্যালয়ে হাজির করা হয়। পরদিন আদালতে হাজির করা হলে, মহসীন মিয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেন।
২০২৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল। শিবপুরের নিজ বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হন উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান। আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও পরে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে ৩১ মে, ২০২৩ সালে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।পরদিন তাঁর ছেলে আমানুর রশিদ খান শিবপুর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-১৭, তাং-২৭/০২/২০২৩)। তদন্তে উঠে আসে, এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ঘটনার পরপরই আসামিরা দেশত্যাগ করে।
হত্যার আগের দিন, ২৪ ফেব্রুয়ারি, দুবাই থেকে আসামি আরিফ সরকার ভিকটিমকে ফোন করে জানান, তাঁর পক্ষে মহসীন মিয়া মসজিদের অনুদান নিয়ে আসবেন। নির্ধারিত দিনে ভোরে মহসীন মিয়া দুইজন শুটারসহ ভিকটিমের বাসায় ঢোকেন। ড্রয়িং রুমে কথোপকথনের এক পর্যায়ে হঠাৎ গুলি করে পালিয়ে যান তাঁরা।
ঘটনার সময় তারা একটি মোটরসাইকেল ও একটি প্রাইভেটকার ব্যবহার করে সীমান্ত দিয়ে দেশত্যাগ করেন। তদন্তে জানা যায়, পালাতে সহযোগিতা করেন আসামি হুমায়ুন, যিনি আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত তাদের গাড়ি করে পৌঁছে দেন।
ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে মহসীন মিয়া, শুটার ইরান মোল্লা, মোবারক হোসেন এবং মূল পরিকল্পনাকারী আরিফ সরকারের অবস্থান শনাক্ত করে পিবিআই। নরসিংদী জেলা পুলিশের সহায়তায় ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করা হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে যে, তারা দুবাইয়ে অবস্থান করছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে মহসীন মিয়াকে গ্রেফতার করে দেশে আনা হয়। এর আগেও মামলার অপর দুই আসামি ফরহাদ হোসেন ও আরিফুল ইসলাম আরিফ অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়ে আদালতে দোষ স্বীকার করেছে।
নরসিংদী জেলা পিবিআই ইউনিট ইনচার্জ, অতিরিক্ত ডিআইজি এস.এম মোস্তাইন হোসেন বিপিএম (বার) বলেন: "বহুমুখী প্রচেষ্টা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় আমরা হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আদালতে জবানবন্দিতে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। আমরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।"
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) মন্তোষ চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
চূড়ান্ত বিচারের মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশিদ খানের হত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে—এটাই এখন নরসিংদীবাসীর প্রত্যাশা।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo