কেনা দামও যদি না পাই গায় আগুন জালাইয়া মইর্যা যামু হেও ভালো। বাইচ্যা থাইক্যা করমু কি? মইর্যা গ্যালে পাওনা দাররা টাহা চাইতে পারবে না।
এহন সরকার পারে মোগো বাচাইতে নালে কোন উপায় থাকবে না।’ কথাগুলো বলছিলেন আমতলী পৌরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের খুচরা কাঁচা চামড়া কেনা মৌসুমি ব্যাবসীয় মাওলানা মো. সুলাইমান।
সুলাইমানের মত একই বয়ান চামড়া কিনে সংরক্ষণ করা অর্ধশতাধিক ব্যাসায়ীর। ইদুল ফিতর কেন্দ্রিক এসকল ব্যবসায়ীরা খুচরা চামরা কিনে ব্যবসা করে থাকে।
গুলিশাখালী ইউনিয়নের গোছখালী সলিমাবাদ মাজার শরীফ ও এতিম খানার মৌসুমি চামরা ব্যবসায়ী মো. সাকিবেরও একই কথা।
তিনি আরো বলেন, ধার দেনা করে পৌনে দুই লক্ষ টাকায় ২৫০টি গরুর চামড়া কিনেছি। এখন ৭০-৮০ হাজার টাকা দাম বলছেন পাইকাররা। ঘাটতি টাকা কি ভাবে মিটব সেই চিন্তায় আছি। আমতলী উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবছর মোট ৬ হাজার ৫শ’ ৩১টি কোরবানি হয়েছে।এর মধ্যে ৫হাজার ৪শ’ গরু ১টি গরু, ৭০টি মহিষ ও ৮শ’৬০টি ছাগল রয়েছে। কোরবানি দেওয়া এসকল পশুর অধিকাংশ চামড়া স্থানীয় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা সামান্য মুনাফার আশায় কিনে থাকেন।
এসকল ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে ৭-৮শ টাকায় বড় সাইজের গরুর, এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায় মহিষের এবংএকশ’ থেকে দেড়শ’ টাকায় কাঁচা চামড়া কিনে লবন দিয়ে গুদামে সংরক্ষণ করেন। সংরক্ষনের প্রায় সোয়া দুই মাস পর ব্যসায়ীরা চামরা বিক্রি করতে গিয়ে হতাশ হয়ে পরেছেন।
বাজারে চামড়ার দরপতন হওয়ায় ক্রয় মূল্যের এখন অর্ধেকের নীচে দাম বলছেন পাইকাররা। সোম ও মঙ্গলবার দু’দিন আমতলী উপজেলার গোছখালী, একেস্কুল, ডালাচারা, পৌরসভার বাঁধঘাটসহ ৪-৫টি মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীর গুদাম ঘুরে দেখা গেছে, লবন দেওয়া শত শত গরু মহিষ ও ছাগলের চামড়া স্তুপ আকারে গুদামে পরে আছে।চামড়ার দরপতন হওয়ায় এসকল চামড়া এখন আর কোন পাইকারী ব্যবসায়ীরা কিনতে চাচ্ছে না। কেউ কিনতে চাইলেও দাম বলছেন ক্রয় করা মূল্যের অর্ধেকেরও নীচে।
আমতলী পৌরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী মাওলানা মীর মো. সুলাইমান বলেন, কোরবানীর সময় আমি এ বছর ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা দামে (প্রতি পিচ) ২ হাজার ২শ’ গরুর চামড়া কিনেছি। এতে আমার খরচ হয়েছে ১৭ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা।
প্রায় সোয়া দুই মাস চালান খাটিয়েছি। লেবার নিয়ে নিজে কাজ করেছি। এখন পাইকাররা চামড়ার দাম বলছেন ৩শ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ টাকা।
এতে আমার চালান অর্ধেকের বেশী নাই। এখন আমি এই ঘাটতির টাকা কোথায় পাবো। কি ভাবে পাওনাদারদের টাকা মিটাবো। ‘কেনা দামও যদি না পাই হ্যালে গায় আগুন জ¦ালাইয়া মইর্যারা যামু। বাইচ্যা থাইক্যা লাভ কি? মইর্যা গ্যালে পাওনা দাররা টাহা চাইতে পারবে না।
এহন সরকার পারে মোগো বাচাইতে নাইলে কোন উপায় থাকবে না।’ গুলিশাখালী ইউনিয়নের গোছখালী সলিমাবাদ মাজার শরীফ ও এতিম খানার মৌসুমি চামরা ব্যবসায়ী মাওলানা মো. সাকিব বলেন, ধার দেনা করে পৌনে দুই লক্ষ টাকায় ২৫০টি গরুর চামড়া কিনেছি। এখন ৭০-৮০ হাজার টাকা দাম বলছেন পাইকাররা।
ঘাটতি টাকা কি ভাবে মিটাব সেই চিন্তায় আছি। আমতলী ফেরিঘাটের চামড়া ব্যবসায়ী মো. ফয়সাল মৃধা বলেন, চামড়ার দাম না পাইলে খালে হালাইয়া দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
পৌরসভার বটতলা এলাকার ব্যবসায়ী গাজী মো. আব্দুল মন্নান বলেন, সরকার উপজেলা পর্যায়ে প্রতি স্কয়ার ফুট গরু ও মহিষের চামড়ার দাম নির্ধারন করে দেয় ৫০-৬০ এবং ছাগলের ২২-২৭ টাকা। আমরা সে অনুযায়ী চামড়া কিনেছি।
এখন চামড়ার দরপতন হওয়ায় কোন পাইকার দাম বলছেন না। যারাও কিনতে আগ্রহী তারা ক্রয়ের অর্ধেক মূল্য বলছে। বর্তমান দরে চামড়া বিক্রি করলে আমরা পথের ফকির হয়ে যাবো।
আমাদের মেরদন্ড ভেঙ্গে যাবে। আমরা আর ব্যবসা করতে পারবো না। তিনি সরকারের নিকট চামড়ার ন্যায্য মূল্য দাবী করেন। কাঁচা চামড়ার পাইকারী ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, বাজারে চামড়ার দাম কমে যাওয়ায় ট্যানারি মালিকরা চামড়া কিনছে না।
আমাদের করার কিছু নেই। সাভার হেমায়েতপুরের চামড়া ব্যবসায়ী মাস্টার লেদারের প্রোপাইটার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বিদেশীদের অর্ডার বাতিল হওয়া, ডলার এবং ক্যামিকেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা চামড়া কিনছি না।
যে কারনে দেশের অভ্যন্তরে চামড়ার দাম কমে গেছে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, চামড়ার দর পতনে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন এ বিষয়টি সরকারের ঊর্ধতন কতৃপক্ষের নিকট তুলে ধরা হবে।