ভোলার তজুমদ্দিনে পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২ এর অধিনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গোলাম রাব্বানী কনন্ট্রাকশনের স্লুইসগেট নির্মাণকাজে অনিয়মের খবর সংগ্রহকালে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ ৬ জন আহত হয়। এদের মধ্য থেকে ৪ জনকে তজুমদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে শুক্রবার সকালে আজগর আলী নামে ১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
হামলার শিকার সাংবাদিক তজুমদ্দিন প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক জানান, চাঁদপুর ইউনিয়নে নতুন স্লুইসগেটের ঢালাইসহ নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। এলাকাবাসী সাংবাদিকদের ফোন দিয়ে জানাইলে দৈনিক ইত্তেফাকের উপজেলা সংবাদদাতা রফিক সাদীসহ কয়েকজন সাংবাদিক সেখানে যান। এ সময় তাঁরা দেখেন সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কোনো কর্মকর্তা নেই। ঠিকাদারের প্রকৌশলীও ছিলেন না। শ্রমিকেরা কাঁদা মিশ্রিত নিন্মমানের পাথর, বালু, জমাট বাধা সিমেন্ট দিয়েই ঢালায়ের কাজ করছেন। তাঁরা দেখেন বালু, পাথর ও সিমেন্টের অনুপাত ঠিক নেই। এসব বিষয়ে তথ্য ও ভিডিও চিত্র ধারন করতে গেলে ঠিকাদারের পক্ষের লোক হাফেজ ও রুবেল সাংবাদিকের মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে গালমন্দ করেন। তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে আজগর আলী ও আলাউদ্দিন দলবল নিয়ে সাংবাদিকদের উপর হামলা করেন। এ সময় ঢাকা প্রতিদিনের তজুমদ্দিন উপজেলা সংবাদদাতা মোঃ ফারুককে লাঞ্ছিত করেন তারা। পরে গ্রামবাসী সাংবাদিকদের পক্ষ নিলে শ্রমিকেরা তাঁদের উপরও হামলা চালায়। এ সময় দু’পক্ষের সংঘর্ষে মো. শামীম, মো. সেলিম, মো. ফারুক, সালাউদ্দিন, ইয়ামিনসহ ৬ জন গ্রামবাসী আহত হন। তাঁদের মধ্যে ৪ জনকে তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পরবর্তীতে আহত সাংবাদিক মোঃ ফারুক তজুমুদ্দিন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পর শুক্রবার অভিযান চালিয়ে আজগর আলী নামের এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে।
পাউবো সূত্র জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গোলাম রাব্বানী কনস্ট্রাকশন ২টি জলকপাটসহ ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার মাটির বাঁধ নির্মাণ ও বাঁধের তীরে ব্লক ফেলার কাজ করছে। এ কাজের চুক্তিমূল্য ৭৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিন্মমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মো. মমিন বলেন, পাথর, বালু, সিমেন্টের অনুপাত ঠিক ছিল। তিনি আরও বলেন, যখন সাংবাদিকেরা সাইটে গেছেন; তখন সেখানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তা ছিলেন না। তাঁরা অন্য কাজে ছিলেন। এই প্রকৌশলী বলেন, শ্রমিকেরা অশিক্ষিত ও স্থানীয়, তাই তাঁরা কথা-কাটাকাটি করেছেন, যা তাঁদের কাম্য ছিল না।
পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. তানভীর হাসান অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বৃহস্পতিবার ইউএনওর কার্যালয়ে জরুরি সভায় ছিলেন তিনি। ২টা পর তিনি সোনাপুরের সাইটে ছিলেন। আবার অন্য একটি সাইটে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এসেছিলেন। সেখানেও তাঁকে সময় দিতে হয়েছে।
তজুমদ্দিন থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোহাব্বত খান জানান, সাংবাদিকদের হামলার ঘটনায় আজগর আলী নামে অভিযুক্ত ১ জনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া অভিযুক্ত অন্যান্যদের গ্রেফতারে পুলিশের তৎপরতা চলমান আছে।
এ ঘটনায় সাংবাদিক সমাজ ও স্থানীয় সচেতন মহল তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।