তিন ক্লাসে ছয় শিক্ষার্থী আর পাঁচ শিক্ষক দিয়ে চলছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ৫ জুলাই , ২০২৫ ১৬:০৬ আপডেট: ৫ জুলাই , ২০২৫ ১৬:০৬ পিএম
তিন ক্লাসে ছয় শিক্ষার্থী আর পাঁচ শিক্ষক দিয়ে চলছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

 ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর সদর ইউনিয়নের ৯৯ নং উত্তর পূর্ব ছোট কৈবর্তখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সংখ্যা মাত্র ছয়জন। অথচ এই অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য নিয়োজিত রয়েছেন পাঁচজন শিক্ষক। বিদ্যালয়ে রয়েছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও সরকারপ্রদত্ত ল্যাপটপ, কিন্তু তা নেই বাস্তব ব্যবহারে। এমনকি ল্যাপটপটিও বিদ্যালয়ে নেই—প্রধান শিক্ষক সেটি নিয়ে ব্যক্তিগত কাজে বাসায় ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয় ভবনের অধিকাংশ শ্রেণিকক্ষ ফাঁকা। উপস্থিত চারজন শিক্ষক ও ছয়জন শিক্ষার্থী। তৃতীয় শ্রেণিতে চারজন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে এক শিক্ষকের উপস্থিতিতে, অপর শ্রেণিকক্ষে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী বসে গল্প করছে—কোনো শিক্ষক সেখানে নেই।
দুপুর ২টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির হাজিরা খাতায় কোনো উপস্থিতি নেই। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে শিক্ষকেরা তখনই খাতায় উপস্থিতি লিখতে শুরু করেন। 
প্রতিষ্ঠানে কাগজে-কলমে শিক্ষার্থী সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৫১ জন। তবে স্থানীয়দের দাবি, প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫ জন শিক্ষার্থীই ক্লাসে আসে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে শিক্ষকরা সঠিক উত্তর দিতে পারেননি।
বিদ্যালয়ের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালু হয়নি এখনো। প্রধান শিক্ষক সাহিদা খানম এ প্রসঙ্গে বলেন, “মাল্টিমিডিয়া চালু করিনি কারণ সেটআপ দেওয়া হয়নি।”
এ ছাড়া বিদ্যালয়ের ল্যাপটপ প্রসঙ্গে তিনি জানান, “প্রায়ই স্কুলে নিয়ে যাই, তবে ঈদের ছুটির পরে এখনো আনিনি। মূল্যায়ন পরীক্ষা চলছে, কাজে লাগছে।”
সাহিদা খানম আরও দাবি করেন, “প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ জন শিক্ষার্থী ক্লাসে আসে। আজ হয়তো হাজিরা খাতায় সবার নাম ওঠেনি। আমাদের একজন শিক্ষক নেই, সমস্যায় আছি।”
তিনি অনুরোধ করে বলেন, “সব শিক্ষকের মান-ইজ্জত আছে, দয়া করে সংবাদটি প্রকাশ না করেন।”
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আকতার হোসেন বলেন, “সরকারি ল্যাপটপ বিদ্যালয়ে রাখা বাধ্যতামূলক। ক্লাস চলাকালীন হাজিরা নিতে হবে। শিক্ষার্থী অনুপস্থিতিসহ নানা অভিযোগে প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হবে।”
রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহুল চন্দ্র বলেন, “সাংবাদিকদের মাধ্যমে অভিযোগ জেনে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।”


এই বিভাগের আরোও খবর

Logo