টেকসই সমাধানের দাবিতে সোচ্চার এলাকাবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ১২ জুলাই , ২০২৫ ১৬:২২ আপডেট: ১২ জুলাই , ২০২৫ ১৬:২২ পিএম
টেকসই সমাধানের দাবিতে সোচ্চার এলাকাবাসী

 জলাবদ্ধতার মূলে দখলদারিত্ব বন্যায় প্রতি বছর তলিয়ে যায় নোয়াখালী। এবার ত্রাণ নয়, টেকসই সমাধানের দাবিতে সোচ্চার এলাকাবাসী। জলাবদ্ধতার মূলে দখলদারিত্ব বন্যায় প্রতি বছর তলিয়ে যায় নোয়াখালী।তাদের কণ্ঠে একই সুর এবার ত্রাণ নয়, খাল দখলমুক্ত হলে মিলবে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি, ঘুচবে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ। অতীতে ও বর্তমানের ভূমিদস্যুদের রাজনৈতিক প্রভাবে নয়টি উপজেলার খাল দখলের ফলে হাজারো মানুষ পানিবন্দী, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলি জমি, গবাদিপশু ও জনজীবন।প্রতি বছরের মতো এবারও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে নোয়াখালীর বিস্তীর্ণ অঞ্চল। তবে এবার ত্রাণ বিতরণের আশায় নিষ্ক্রিয় বসে নেই ক্ষতিগ্রস্তরা। বরং, এক ব্যতিক্রমী স্লোগানে সোচ্চার হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ.নোয়াখালীর মানুষ গরিব নয়, আমরা ত্রাণ চাই না, খাল দখলমুক্ত চাই! তাদের দৃঢ় দাবি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, লাগামহীন দখল ও দূষণের কারণে জেলার নয়টি উপজেলার খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। এর ফলেই সামান্য বৃষ্টি বা উজানের ঢলে দ্রুত জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে এবং দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে বন্যার ভয়াবহ দুর্ভোগ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এক শ্রেণির ভূমিদস্যু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নির্বিচারে খাল ও জলাশয় দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছে। অতীতের বিভিন্ন সরকার আমলেও এই দখল প্রক্রিয়া লাগামহীনভাবে চলেছে। নোয়াখালীর নয়টি উপজেলার কোনোটিই এই আগ্রাসী দখলদারিত্ব থেকে রক্ষা পায়নি। বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েই এই খালগুলো গ্রাস করা হয়েছে। ফলে পানি প্রবাহের প্রাকৃতিক পথগুলো মারাত্মকভাবে রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর ভয়াবহ ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে, যাদের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি বারবার তলিয়ে যাচ্ছে বন্যার পানিতে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,যদি প্রশাসন কঠোরভাবে হস্তক্ষেপ করত, তাহলে খালের উপরে এত অবৈধ স্থাপনা তৈরি হতে পারত না। প্রতি বর্ষায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে কেবল পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকার কারণে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা জনগণের এই ন্যায়সঙ্গত দাবির সাথে একমত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ বলেন, মানুষের এই ক্ষোভ অত্যন্ত যৌক্তিক। আমরা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এই গুরুতর বিষয়টি তুলে ধরেছি এবং খাল দখলমুক্ত করার জন্য দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছি।
এলাকাবাসী  বলেন.প্রতি বছর ত্রাণ আসে, কিছুদিন চলে, তারপর আবার সেই পুরনো সমস্যা। আমরা সাময়িক ত্রাণ চাই না, আমরা স্থায়ীভাবে বাঁচতে চাই। আমাদের খালগুলো দখলমুক্ত হলে পানি স্বাভাবিকভাবে নিষ্কাশিত হবে, আর কোনোদিন আমাদের এভাবে বন্যায় ভাসতে হবে না। তারা বলেন পানি নিষ্কাশনের অভাবে ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে, গবাদিপশু মারা যাচ্ছে, লক্ষ লক্ষ টাকার মুরগি, হাঁস, শাকসবজি সবকিছুই থমকে যাচ্ছে। মানুষের জনজীবন পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়ছে।জেলার নয়টি উপজেলার প্রতিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি)সহ স্থানীয়রা দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। তাদের মতে, এখনই যদি খাল দখলমুক্ত করার ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে আগামী দিনেও এভাবে জলাবদ্ধতা আর ত্রাণ বিতরণের এক দুষ্টচক্রে আবদ্ধ থাকতে হবে নোয়াখালীর মানুষকে। তারা মনে করেন, খাল দখলমুক্ত করাই মানুষকে জলাবদ্ধতা এবং বন্যা থেকে মুক্তি দেওয়ার একমাত্র কার্যকর উপায়।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক জানিয়েছেন, খাল দখলমুক্ত করার জন্য ইতোমধ্যে একটি বিস্তারিত তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে এবং অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড অনেকগুলো খাল খনন করবে।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে, যা জনগণের মধ্যে হতাশা বাড়াচ্ছে।
মানুষের এই ব্যতিক্রমী আন্দোলন জেলার দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা সমস্যার একটি সুদূরপ্রসারী ও টেকসই সমাধানের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, সরকারের পক্ষ থেকে খাল দখলমুক্ত করার এই জোরালো দাবি পূরণে কতটা দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়, যার উপর নির্ভর করছে লাখো মানুষের ভবিষ্যৎ।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo