কুড়িগ্রামে ক্রেতাশূন্য পশুর হাট, দুশ্চিন্তায় বিক্রেতারা

Asad Zaman প্রকাশিত: ৫ জুন , ২০২৫ ১৪:২৯ আপডেট: ৫ জুন , ২০২৫ ১৪:২৯ পিএম
কুড়িগ্রামে ক্রেতাশূন্য পশুর হাট, দুশ্চিন্তায় বিক্রেতারা

ঈদুল আযহা সামনে রেখে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন কোরবানির পশুর হাটে গরুর প্রচুর সরবরাহ থাকলেও আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না। হাটে উঠেছে নানা জাত ও আকারের গরু, তবে ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতার সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। গরুর দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় কম হলেও বিক্রি না হওয়ায় হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন বিক্রেতারা।

 নাগেশ্বরী উপজেলার বড় পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটজুড়ে গরুর সারি, কিন্তু সেখানে প্রকৃত ক্রেতার দেখা মিলছে হাতে গোনা। একই চিত্র ভুরুঙ্গামারী, যাত্রাপুর, চিলমারী, ফুলবাড়ী ও উলিপুরের পশুর হাটগুলোতেও। অনেক গরু ব্যবসায়ী হাটে বারবার আসছেন, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত দামে বিক্রি করতে পারছেন না।

জেলা ভেটেরিনারি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এবছর জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে মোট ২৯টি পশুর হাট বসানো হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি হাট স্থায়ী এবং ১৪টি অস্থায়ীভাবে পরিচালিত হচ্ছে। কোরবানির উপযোগী পশু প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় দুই লক্ষ বিশ হাজার, যা জেলার চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাইরের জেলাতেও সরবরাহ করা হতে পারে।জেলাজুড়ে ভেটেরিনারি টিম রয়েছে মোট ২৮টি। এসব টিম প্রতিনিয়ত প্রতিটি হাটে ঘুরে ঘুরে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও তদারকি করছে, যাতে করে কোনো ধরনের অসুস্থ বা সংক্রামক রোগে আক্রান্ত পশু হাটে প্রবেশ না করতে পারে। জনস্বাস্থ্য ও প্রাণিসম্পদের সুরক্ষায় তারা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।নাগেশ্বরী হাটে গরু নিয়ে আসা বিক্রেতা জয়নাল বেপারী বলেন, “শনিবার আমার ষাঁড়টির দাম বলেছিল ৮৫ হাজার, আজ কেউ ৮০ হাজারের ওপরে বলছে না। আমি অন্তত ৯৫ হাজার টাকা আশা করছিলাম।”ভুরুঙ্গামারীর গরু ব্যবসায়ী আশরাফ আলী বলেন, “চালান দরে গরু বিক্রি করতে চাই, কিন্তু যে দাম বলা হচ্ছে তা চালান থেকে অন্তত ১০ হাজার টাকা কম। দাম কম হলেও ক্রেতারা আগ্রহ দেখাচ্ছে না।”স্থানীয় হাটগুলোতে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন, ভেটেরিনারি চিকিৎসক, ও স্বেচ্ছাসেবকদের উপস্থিতি থাকলেও বাজার ব্যবস্থাপনায় নতুন কোনো উদ্ভাবনী পদক্ষেপ দেখা যায়নি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মানুষ আগেভাগেই গরু কিনে ফেলায় হাটে এখন দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি, প্রকৃত ক্রেতা কম।গরু কিনতে আসা আনছার মিয়া জানান, “গতবারের তুলনায় দাম কিছুটা কম, তবে গরুর চেহারায় তেমন তৃপ্তি পাচ্ছি না। ভালো মানের গরু তুলনামূলক কম।”গরুর হাটে মন্দা থাকলেও ছাগলের বাজারে তুলনামূলক কিছুটা সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। হাটে ছোট ও মাঝারি আকারের ছাগলের ভালো চাহিদা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ক্রেতারা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় ছাগলের দাম এবার একটু বেশি। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো ছাগল কেনার দিকেই বেশি ঝুঁকছে।ছাগল কিনতে আসা আবু তালেব বলেন, “গরু বড় খরচের ব্যাপার, তাই আমরা এবার ছাগল নিয়েই কোরবানি করব। হাটে ৭-৮ হাজার টাকার মধ্যে ভালো মানের ছাগল পাওয়া যাচ্ছে, যদিও গতবারের চেয়ে কিছুটা দাম বেশি।”বিক্রেতা আমজাদ হোসেন জানান, “গরু বেচা যাচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু ছাগল বিক্রি মোটামুটি চলছে। ছোট ছাগলের দাম ৬-৭ হাজার, মাঝারি ৯-১২ হাজার, বড় ছাগল ১৫ হাজার পর্যন্ত যাচ্ছে।”কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো. হাবিবুর রহমান  বলেন, “জেলার প্রতিটি পশুর হাটে ভেটেরিনারি চিকিৎসক দল কাজ করছে। পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও টিকা প্রদান নিশ্চিত করা হচ্ছে। বিশেষভাবে নজরদারি করা হচ্ছে যেন কেউ গরু মোটা করার জন্য স্টেরয়েড বা ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার না করে। এসব বিষয়ে আমরা নিয়মিত মনিটরিং করছি।”সার্বিকভাবে কুড়িগ্রামের কোরবানির পশুর হাটে ব্যবসায়ীদের মাঝে একটি অনিশ্চয়তা ও উৎকণ্ঠা কাজ করছে। অনেকেই ধারদেনা করে পশু কিনেছেন, চারণ খরচ ও পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে। এই অবস্থায় বিক্রি না হওয়ায় তারা অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন। তবে হাটে আশা নিয়ে অপেক্ষা করছেন তারা, ঈদের আগের দিনগুলোতে বিক্রির গতি কিছুটা বাড়তে পারে—এমনটিই তাঁদের প্রত্যাশা।


এই বিভাগের আরোও খবর

Logo